শেখ ফজলুল হক মনি। বাংলাদেশের ছাত্র রাজনীতি ও স্বাধিকার আন্দোলনের নক্ষত্র, বাঙালি জাতীয়তাবাদ আন্দোলনের সজনশীল যুবনেতা ও মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স তথা মুজিব বাহিনির অন্যতম প্রধান কমান্ডার শেখ ফজলুল হক মনি ১৯৩৯ সালের ৪ ডিসেম্বর টুঙ্গিপাড়ায় ঐতিহাসিক শেখ পরিবারে জন্ম নেন। তার বাবা মরহুম শেখ নূরুল হক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভগ্নিপতি। মা শেখ আছিয়া বেগম বঙ্গবন্ধুর বড় বােন। শেখ ফজলুল হক মনি ঢাকা নব কুমার ইনিস্টিটিউট থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেন। এরপর ১৯৫৮ সালে তিনি জগন্নাথ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেন। ১৯৬০ সালে তিনি বরিশাল বিএম কলেজ থেকে বিএ ডিগ্রি লাভ করেন। শেখ ফজলুল হক মনি কেবল রাজনীতি নয়, সাহিত্য এবং সাংবাদিকতায়ও অবদান রাখেন। তার লেখা ‘অবাঞ্ছিতা’ উপন্যাস পাঠক সমাদৃত। এছাড়া তিনি দৈনিক বাংলার বাণী, ইংরেজি দৈনিক বাংলাদেশ টাইমস ও বিনােদন ম্যাগাজিন ‘সিনেমা’র সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ছাত্রজীবন থেকেই মনি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ষাটের দশকে সামরিক শাসনবিরােধী ছাত্র আন্দোলনে তিনি সাহসী নেতৃত্ব দেন। ১৯৬০-১৯৬৩ সালে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। ১৯৬২ সালে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন রির্পোটের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ায় তিনি গ্রেফতার হন এবং ছয় মাস কারাভােগ করেন।
পূর্ণেন্দু দস্তিদারের জন্ম ১৯০৯ সালের ২০ জুন চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া থানাধীন ধলঘাট গ্রামে। তার বাবা চন্দ্রকুমার। দস্তিদার চট্টগ্রাম আদালতে চাকরি করতেন। চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুল থেকে প্রবেশিকা ও চট্টগ্রাম কলেজ থেকে আইএসসি পাশ করার পর পুর্ণেন্দু দস্তিদার যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হন। তার আগে স্কুল-কলেজে পড়া অবস্থায়ই তিনি বিপ্লবী রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তিনি যখন ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শেষবর্ষের ছাত্র তখনই চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের সঙ্গে জড়িয়ে থাকার অভিযােগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রথমে আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে এবং পরে মেদিনীপুরের হিজলি জেলে ও রাজপুতানার দেউলি জেলে বন্দি করে রাখা হয় তাঁকে। বন্দি অবস্থায়ই তিনি ডিস্টিংশনসহ বিএসসি ও পরে ল পাশ করেন। এই বন্দিজীবনেই মার্কসবাদী তত্ত্বের সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঘটে এবং তিনি কমিউনিস্ট মতাদর্শে দীক্ষিত হন। কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যােগাযােগ ঘটে তার, যা আমৃত্যু স্থায়ী হয়। দেশভাগের পর আইন ব্যবসার পাশাপাশি তিনি প্রগতিশীল রাজনীতিতে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করেন। ১৯৪৮ সালে তাকে আবার গ্রেপ্তার করা হয়। এই বন্দি অবস্থায়ই ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের মনােনয়নে তিনি প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। পরিষদে তিনি চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের শহীদদের স্মৃতিতে স্মারকস্তম্ভ নির্মাণের প্রস্তাব করলে তা গৃহীত হয়। ১৯৫৭ সালে ন্যাশনাল আওয়ামি পার্টি (ন্যাপ) গঠিত হলে তিনি তার সঙ্গে যুক্ত হন। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত তিনি ন্যাপ-এর চট্টগ্রাম শহর শাখার সভাপতি ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর দুর্গম পাহাড়ি পথ অতিক্রম করে সীমান্ত অতিক্রম করার সময় অসুস্থ অবস্থায় ১৯৭১ সালের ৯ মে ভারতের উত্তপূর্বাঞ্চলের বাজেতলাং সীমান্ত ঘাঁটিতে তিনি মৃত্যু বরণ করেন। তিন দফায় পাকিস্তানি শাসনামলের তেইশ বছরের ষােল বছরই পূর্ণেন্দু দস্তিদারকে কারান্তরালে কাটাতে হয়। বন্দি অবস্থায় জ্ঞানচর্চার পাশাপাশি তিনি লেখালেখি করেন। স্বাধীনতা সংগ্রামে চট্টগ্রাম (১৯৬৭) ছাড়াও তাঁর প্রকাশিত অন্যান্য গ্রন্থ হল কবিয়াল রমেশ শীল (১৯৬৩) ও বীরকন্যা প্রীতিলতা (১৯৭০)! এছাড়াও তিনি শেখভ ও মোপাসার গল্প অনুবাদ করেন।
সুফিয়া বেগম বর্তমান সময়ের একজন প্রতিশ্রুতিশীল লেখক। জন্ম ১৯৬৪ সালে, ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইলে। পিতা মরহুম আব্দুল কাদের আকন্দ। মাতা রাশেদা বেগম। সুফিয়া বেগম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে এমএ পাশ করেছেন । স্কুল জীবন থেকেই তার লেখালেখির শুরু। এযাবৎ তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৭টি। পেশায় ব্যাংকার ।।
১৯৫৫ সালের ৮ সেপ্টেম্বর বিক্রমপুরের মেদিনীমণ্ডল গ্রামে প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলনের জন্ম। লেখনীশক্তির পাশাপাশি তার রয়েছে নাট্যরচনায় পারদর্শিতা। বর্তমানে বাংলাদেশের মূলধারার সংবাদপত্র ‘কালের কন্ঠ’-এর সম্পাদক পদেও নিয়োজিত রয়েছেন তিনি। শিশুতোষ গল্প দিয়ে সাহিত্য অঙ্গনে এ গুণী লেখকের প্রবেশ, যা প্রকাশিত হয়েছিলো ‘কিশোর বাংলা’ নামক এক পত্রিকায়। তবে পাঠকের নজরে পড়েছিলেন ‘সজনী’ নামের ছোট গল্প লিখে। খুব অল্প বয়সে তিনি লেখালেখিকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন। ফলে তার লেখার বিষয়বস্তুতে কোনো জটিল সমীকরণের দেখা মিলতো না, পাঠককে বিমল আনন্দ দেয়ার উদ্দেশ্যে প্রথমদিকে তিনি ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ বিষয়গুলোকে পরিহার করেছিলেন। তবে পরবর্তীতে ইমদাদুল হক মিলন এর বই সমূহ-তে মুক্তিযুদ্ধ, হাজাম সম্প্রদায়ের জীবন, প্রবাসী শ্রমিকদের দুঃখগাথা, পাটচাষী, গ্রাম বাংলার সমাজের এক নিখুঁত চিত্রও ফুটে উঠতে দেখা যায়। এ প্রসঙ্গে লেখকের বক্তব্য, তিনি নিজেই লেখার এরকম বিপরীতধর্মী দুটি ধরন আপন করে নিয়েছেন, আর এক্ষেত্রে তার অণুপ্রেরণা ছিলেন সমরেশ বসু। ইমদাদুল হক মিলন এর বই সমগ্র-তে স্থান পেয়েছে প্রায় দেড় শতাধিক নাটক এবং প্রায় দু’শো উপন্যাস। শিশুতোষ গল্প এবং ভৌতিক উপন্যাস রচনাতেও তার জুড়ি নেই। এই বৈচিত্র্যপূর্ণ সৃষ্টিশীলতার কারণে বাংলা উপন্যাস ইমদাদুল হক মিলন এর কাছে কৃতজ্ঞ। শুধু বাংলাদেশ না, পশ্চিমবঙ্গেও তার সমান জনপ্রিয়তা রয়েছে। দুই বাংলায় আলোড়ন সৃষ্টিকারী তার বহুল পঠিত উপন্যাস হলো ‘নূরজাহান’। এছাড়াও ইমদাদুল হক মিলন এর উপন্যাস সমগ্র বিভিন্ন পাঠকপ্রিয় উপন্যাসে ঠাসা। তাঁর কিছু উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হলো ‘জিন্দাবাহার’, ‘নিঝুম নিশিরাতে’, ‘যাবজ্জীবন’, ‘কালাকাল’, ‘কালো ঘোড়া’, ‘ভূমিপুত্র’, ‘পরাধীনতা’, ‘কে’, ‘তাহারা’, ‘ভূতের নাম রমাকান্ত কামার’ ইত্যাদি। দেশি-বিদেশি নানা সম্মানজনক পুরস্কারের পাশাপাশি ২০১৯ সালে তিনি একুশে পদক পান।